বাংলায় কি আর ঈ-কার নেই???

'সহকারি' শব্দটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০১২ সালের শেষ দিকে। জনাব জাহিদুল ইসলাম আমাকে একটা ভিজিটিং কার্ড দেন যাতে লেখা ছিল "সহকারি শিক্ষক, বাংলা"। 'সহকারি' শব্দটি দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। বাংলার শিক্ষক তো বাংলায় ভুল করার কথা না! ভেবেছিলাম- কি জানি হয়তো বাংলা বানান থেকে ঈ-কার উঠে গেছে। তবে কি 'জীবন' হয়ে গেছে 'জিবন'? 'নদী' হয়ে গেছে 'নদি'? 'বীর' হয়ে গেছে 'বির'?

ইদানীং দেখছি বিজ্ঞ কলেজ শিক্ষকবৃন্দও জেনে-বুঝে 'সহকারি অধ্যাপক' লিখছেন। 'সহযোগি অধ্যাপক' লিখতেও কাউকে কাউকে কদাচিৎ দেখা যায়। তবে কি 'সরকারি' বানানের মতো সব বানানেই ই-কার চালু হয়ে গেছে?

একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি তো বলেই ফেললেন, " শুনেন, 'শাড়ী' যদি 'শাড়ি' হয়, 'গাড়ী' যদি 'গাড়ি' হয়, 'বাড়ী' যদি 'বাড়ি' হয়, 'হাতী' যদি 'হাতি' হয়, 'পাখী' যদি 'পাখি' হয়, 'ইংরেজী' যদি 'ইংরেজি' হয়, 'সরকারী' যদি 'সরকারি' হয়- তবে 'সহকারি', 'সহযোগি', 'কৃতি'- ইত্যাদি লিখলে সমস্যা কী?"

আমি তাকে সবিনয়ে বললাম, "দেখুন, প্রমিত বাংলা বানানরীতি অনুসারে তৎসম শব্দ বাদে সকল তদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দে ঈ কিংবা ঈ-কার হবে না। হবে ই কিংবা ই-কার। যেমন: ইদ (ঈদ নয়), চিনা (চীনা নয়), ইমান (ঈমান নয়), নবি (নবী নয়)- ইত্যাদি।"

তিনি বললেন, "এত ক্যাচালে কে যায়? তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দ চিনতে গেলে জান থাকবে না।"

জান থাকুক কিংবা নাই থাকুক, বাংলা বানান শুদ্ধ করার চেষ্টা তো করতেই হবে।
বাংলা নাকি বাঙলা? 

আসুন কিছু নিয়ম বোঝার চেষ্টা করি:-

১। শব্দের অন্তে জীবী হবে, জিবি কিংবা জীবি হবে না। যেমন: চাকরিজীবী, পেশাজীবী, কৃষিজীবী, কর্মজীবী, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী- ইত্যাদি।
আবার, 'জীবীকা' হবে না। হবে 'জীবিকা'খেয়াল রাখুন।

২। প্রচুর অর্থে 'বেশি' হবে। বেশ ধারণ অর্থে হবে 'বেশী'। যেমন: ছদ্মবেশী।

৩। ধনুক অর্থে 'তির'। নদীর পাড় বুঝালে হবে 'তীর'।

৪। ব্যক্তির ক্ষেত্রে শব্দের অন্তে 'আরী' হবে। যেমন: কর্মচারী, সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী- ইত্যাদি। অন্যান্য ক্ষেত্রে হবে 'আরি'। যেমন: সরকারি, দরকারি, তরকারি- ইত্যাদি।

৫। শব্দের অন্তে 'আবলি' হয়। যেমন: কবিতাবলি, শর্তাবলি, নিয়মাবলি, তথ্যাবলি- ইত্যাদি।

৬। শব্দের অন্তে 'অঞ্জলি' হবে। 'অঞ্জলী' হবে না। যেমন: গীতাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি, পুষ্পাঞ্জলি- ইত্যাদি।

৭। বসবাসরত অর্থে 'বাসী' হবে, 'বাসি' নয়। যেমন: গ্রামবাসী, দেশবাসী- ইত্যাদি। কিন্তু 'ভালোবাসি'। কারণটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন।

৮। বিশেষণ পদে ঈ-কার হলেও, বিশেষ্য পদে ই-কার হবে। যেমন: 'সহযোগী' কিন্তু 'সহযোগিতা', 'প্রতিযোগী' কিন্তু 'প্রতিযোগিতা', 'মন্ত্রী' কিন্তু 'মন্ত্রিত্ব', 'কৃতী' কিন্তু 'কৃতিত্ব'- ইত্যাদি।

৯। শব্দের অন্তে 'আলি' হয়। 'আলী' হবে না। যেমন: রুপালি, পুবালি, সোনালি- ইত্যাদি।

"ই" এবং "য়"-এর পার্থক্য নিয়ে আমার লেকচার পড়তে ক্লিক করুন এখানে ।  

আরও জানতে বাংলা একাডেমী প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম- এর পিডিএফ ফর্মেটটি  এখান থেকে ডাউনলোড  করে নিন।

(প্রমিত বাংলা বানানবিধি)

আর কতকাল-
খেয়ে মোগলাই পরোটা
বাংলা বানানের
বাজাবেন বারোটা....

লেখা ও গবেষণা
ওয়াদুদ খান
৯ জুলাই, ২০১৭
সদরপুর, ফরিদপুর



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা বানানে ও-কার নিয়ে যত গণ্ডগোল ও বিভ্রান্তি!

(পর্ব-২) গুরুত্বপূর্ণ কিছু শুদ্ধ (বাংলা) বানান (শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী)

এসএসসি, এইচএসসি-সহ বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় আসা বাংলা (অশুদ্ধ-শুদ্ধ) বানানের তালিকা (পর্ব-১)