বুলবাল ভাংলা (ভুলভাল বাংলা)

সেই ২০০৪ সালের কথা। আমার ছাত্র ছিল হামিদুল। মাঝে মাঝে কথার ছলে বলতো, 
"স্যার, আমার খালি বান্নাম ভূল হয়।" 
আমার হাসি পেত। বলতাম, 'বান্নাম' নয়, হবে- 'বানান'। আর 'ভূল' হবে না। হবে- 'ভুল'।

হেসে উত্তর দিত সে, "দেখলেন তো ভুলের বানানও ভুল।"

ভুলভাল বাংলার একটি বাস্তব চিত্র



ইদানীং ফেসবুকের দিকে তাকালে বড্ড হতাশ হই। বাংলা বানানের শুদ্ধতার দিকে কারও এতটুকু নজর নেই। 
সেদিন ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেখলাম-
"অদবুত ওঠের পিটে চলেসে স্বদ্বেষ"
দয়াকরে ভাববেন না, আপনাদেরকে সস্তা বিনোদন দিতে এসব কথা মেগাবাইট খরচ করে লিখছি। আপনিও একটু চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, চোখে পড়বে।

আমাকে এক ছাত্র সেদিন একটা মেসেজ দিলো। ছাত্রটির ফেসবুক নাম 'আমি সুদু তুমার'। ছাত্রটি লিখেছে-

"সার, আপনের লেকা পরে বেপুক বিনুদুন পাই।"

মেসেজটি পড়ে একাই হাসতে থাকি। রিপ্লাইয়ে লিখে দেই-
"কপাল ভালো যে আমাকে 'সার' বলেছো, 'ষাঁড়' বলো নাই।

বাংলা বানানের নিয়ম কানুন মানছে না কেউই। 
সবাই যেন ধরেই নিয়েছে- 'যেমন ইচ্ছে লেখার আমার বাংলার খাতা'।

বাংলা বানানের শুদ্ধতার কথা লিখি বলে একজন তো আমাকে ব্লকই করে দিলো। সাক্ষাতে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, সে জানালো-
"আপনের ষ্টেটাশ পরার পড়ে আমি তো লেকাই ভুইল্যা গেসি। যা লেকি তাই বুল। আপনেরে ফেরেন্ড হিষেবে রাকলে আমার আর ষ্টেটাশ দিওন যাইবো না। তাই বল্লক মারছি।"

সেদিন কলেজের ছাত্রনেতা কামরুলের সাথে দেখা। বাংলা বানান নিয়ে আমার সমস্ত পোস্ট সে নাকি পড়ে। আমাকে দেখেই সে হাত উঁচিয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করল-
"বুজলেন সার, এইডা অইল ইন্ডিয়ার শরযন্ত। সরকারের পতন গটাইতে হইবে।"

আমি হাসতে চেয়েও হাসতে পারি না। চোখে জল চলে আসে।
এইসব কথা শোনালে, আমার ভক্ত আবুল বলে, "আপনের কতা শুনলে খালি হাঁসি পাই।"

বাংলা বানানের এই করুণ পরিণতির কথা জানালে আমার দাদাজান হেসে লুটোপুটি খান।ছন্দ ছেড়ে দিয়ে বলেন -

বাঙালি খায় ভাত আর ভর্তা
পায় না তো আর রুটি, পরোটা
পেটটা শুকিয়ে, পড়াটা গুটিয়ে
বানানের বাজাচ্ছে বারোটা।

আমি বললাম, "দাদা, তোমার কবিতার আগা মাথা বুঝলাম না।" দাদা বিজ্ঞের মতো বললেন, "আগা মাথা বুঝা গেলে কি আর সেটা কবিতা হয়?কবিতার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তার আগা মাথা বুঝা যাবে না।"

আমার ছাত্র ও ভক্ত মফিজুল কিছু লিখে ফেসবুকে ছাড়লেই জাস্ট নাওতে লাইক পায় কমপক্ষে তেতাল্লিশটা।
এর সিক্রেট জিজ্ঞেস করলে বলে,

"বুলবাল ভাংলা না লিখলে  ষ্ট্যাটাশে লাইক বারে না।"

আমি প্রমিত বাংলা বানানের বিধিতে চোখ রাখি। আমার সত্যি কান্না আসে। চোখের জল মুছতে মুছতে একটা স্ট্যাটাস প্রসব করি-

"প্রিয় ভক্তকুল, তোমাদের কারো কাছে একটু টিস্যু হবে?"

জাস্ট নাওতে একটা কমেন্ট আসে,

"ষাঁড়,  আপনার কি আগু পাইচে? টিছ্যু চাইলেন যেঁ...  কি করতাছুন?"

আমি বালিশ দিয়ে মুখ ঢাকি।
নিশ্বাস নিতে আর ইচ্ছে করে না।

[নীল রঙের বাক্যগুলি মনোযোগ সহকারে আবার পড়ুন। খুঁজে দেখুন- কতটা ভুলভাল বাংলা বাক্যে ভরা। আমাদের সমাজে এখন এমন বাংলাই প্রচলিত।]

আরো লেখা পেতে আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন।
ক্লিক করুন এখানে 

লেখাঃ ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি 
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর

কবি ও কথাশিল্পী

মন্তব্যসমূহ

  1. Sir ami to apnar lekha deikha haste haste sesh.... English a lekhlam. Karon jodi abar amar lekha vhul hoy. Taholei to copy kore delivery koira diben. kichu mone koiren na tai english a lekhlam....

    উত্তরমুছুন
  2. ধন্যবাদ তোমাকে...
    কমেন্ট করার জন্য।
    ফ্রেন্ডদেরও পড়তে উৎসাহিত করো।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা বানানে ও-কার নিয়ে যত গণ্ডগোল ও বিভ্রান্তি!

(পর্ব-২) গুরুত্বপূর্ণ কিছু শুদ্ধ (বাংলা) বানান (শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী)

এসএসসি, এইচএসসি-সহ বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় আসা বাংলা (অশুদ্ধ-শুদ্ধ) বানানের তালিকা (পর্ব-১)